সুচিপত্র
- 1 মেথি কী?
- 2 মেথির উপকারিতা চুলের জন্য
- 3 চুলের বৃদ্ধিতে মেথির উপকারিতা চুলের জন্য
- 4 চুল পড়া প্রতিরোধ করে
- 5 নতুন চুল গজাতে
- 6 অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা দূর
- 7 খুশকি দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখতে
- 8 মসৃণ ও ঝলমলে চুল
- 9 মাথার ত্বক ভালো রাখে
- 10 মেথির উপকারিতা চুলের জন্য কীভাবে মেথি ব্যবহার করতে হবে?
- 11 Share Now:
চুল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম প্রতীক। তাই, চুলের যত্নে মানুষের চেষ্টার কমতি থাকে না। কত টাকা, কত সময়, কত শ্রম মানুষ ব্যয় করছে চুল সুন্দর রাখতে। কিন্তু কার্যকর ফলাফল মিলছে না। যদি শুনেন, ঘরেই চুলের যত্ন নেওয়ার কার্যকরী একটি উপকরণ রয়েছে, তাহলে কেমন অনুভব হবে? ঠিক তাই, চুলের যত্নে মেথির উপকারিতা অনেককাল আগে থেকে মানুষ জেনে আসছে। মেথির স্বাস্থ্য উপকারিতাও কম নয়। ত্বকের সুরক্ষায়, পরিপাকক্রিয়ায় মেথির দারুণ কার্যকারিতা পাওয়া যায়। এই লেখায় শুধু মেথির উপকারিতা চুলের জন্য, কীভাবে মেথি ব্যবহার করতে হবে এসব সম্পর্কে জেনে নিন।
মেথি কী?
মেথি একটি বীজজাতীয় বস্তু। গাছ থেকে মেথি বীজ সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় দেখতে কিছুটা হলদে সবুজ রঙের হয়। তবে পরবর্তীতে হলদে রঙ ধারণ করে মেথি বীজ। সেই বীজ ব্যবহার করা যায় নানারকম কাজে। হারবাল মেডিসিন তৈরিতে মেথি প্রয়োজনীয় এক উপকরণ, কারণ এটি একপ্রকার ঔষধি গাছ। মেথি ব্যবহার করা যায় রান্নায়ও। রান্নায় স্বাদ বাড়াতে, হরেক রকম মজাদার খাবার তৈরিতে উপকরণ হিসেবে মেথির ব্যবহার পরিচিত।
মেথিতে রয়েছে ভিটামিন-বি ৬, ভিটামিন-সি, প্রোটিন, লেসিথিন, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, সোডিয়াম সহ একাধিক পুষ্টি উপাদান।
এসব উপাদান মেথিকে স্বাস্থ্য উপকারী বস্তুতে পরিণত করেছে। হজমশক্তির উন্নতি, ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর, পুরুষদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহ সৃষ্টি, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতিতে মেথির গুণাগুণ রয়েছে। মেথির সবচেয়ে প্রত্যক্ষ গুণাগুণ প্রকাশ পায় চুলের যত্নে। চুল পড়া, চুলের ভঙ্গুরতা, খুশকি দূর, মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়ানোর কাজে মেথি কার্যকর।
নারীদের চুলের পরিচর্যায় মেথির ব্যবহার হচ্ছে যুগযুগ ধরে। সঠিক ধারণা না থাকায় অনেকেই এই অসাধারণ কার্যকর বস্তুটি ব্যবহার করতে পারে না।
জেনে নিন, কীভাবে মেথি চুলের উপকার করে।
মেথির উপকারিতা চুলের জন্য
চুলের যত্ন হচ্ছে – চুলকে ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা, চুলে পুষ্টির জোগান দেওয়া, খুশকি মুক্ত মাথার ত্বক, ঝলমলে সুন্দর চুল। ঠিকমতো যত্ন না পেলে অন্য সবকিছুর মতো চুলও তার স্বাভাবিকতা হারিয়ে ফেলে।
নিয়মিত চুলে মেথি ব্যবহার করলে তা চুলের স্বাভাবিকতা ধরে রাখবে এবং চুলকে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগাবে।
মেথি ব্যবহারে চুলের যে উপকারিতাসমূহ পাওয়া যায় সেগুলো নিম্নরূপ:

চুলের বৃদ্ধিতে মেথির উপকারিতা চুলের জন্য
প্রোটিন যেমন প্রাণী দেহের বৃদ্ধিতে কাজ করে, তেমনি চুলের বৃদ্ধিতেও প্রোটিন সহায়তা করে। প্মেথিতে রয়েছে প্রোটিন ও আয়রন যা চুলের স্বাভাবিক স্বাস্থ্য বজায় রেখে চুলকে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করে। চুলের বেড়ে ওঠায় এই দুই পুষ্টি উপাদান অতি প্রয়োজনীয়। চুলের বেড়ে ওঠার পথে বাঁধা কাটিয়ে চুলকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করে।
চুল পড়া প্রতিরোধ করে
বর্তমান যুগে চুল পড়া নিয়ে চিন্তায় থাকে অনেকেই। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই চুল পড়ে। দূর্বল চুল পড়ে গিয়ে সেখানে নতুন চুল গজায়। এটাই চুলের জীবনচক্রের পদ্ধতি। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনিক ১০০ টি পর্যন্ত চুল পড়া স্বাভাবিক। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু যদি চুল পড়ার হার বেড়ে যায়, তখন তা স্বাভাবিক থাকে না। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, পুষ্টিকর খাবার না খাওয়া, চুলে পুষ্টি পৌঁছাতে না পারা, হরমোনের সমস্যা, আদ্র আবহাওয়া – এই কারণগুলোই চুল পড়ার পেছনে প্রধান।
মেথির প্রোটিন চুলের গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ফলে চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পেতে সক্ষম হয়। তাতে করে চুল পড়ার হারও কমে।
নতুন চুল গজাতে
চুল তার জীবনচক্র অনুসারে ভেঙ্গে পড়ে, পড়ে যাওয়া চুলের জায়গায় নতুন চুল ওঠে। মেথি চুলের জন্য এই কাজটিকে আরও সহজ করে তোলে। চুল যদি সঠিক পুষ্টি পায়, তাহলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। চুলকে পুষ্টি জোগানোর কাজ করে মেথি।
অল্প বয়সে চুল পেকে যাওয়ার সমস্যা দূর
আমাদের আশেপাশে কিছু মানুষকে দেখা যায় তাদের বয়স বেশি না হলেও মাথার চুল, দাঁড়ি সাদা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ চুল পেকে যাচ্ছে। দেহে ভিটামিন ও আয়োডিনের অভাব, জটিল কোনো শারীরিক ও মানসিক রোগের কারণে এই অবস্থা হয়। এই সমস্যা গুলোর কারণে চুলের রঙ তৈরিকারী কোষগুলো অকার্যকর হয়ে যায়, ফলে চুল সাদা হতে শুরু করে। কম বয়সেই পাকা চুল নিয়ে বাইরে বের হতে অনেকেই অস্বস্তিতে ভোগে। তাদের অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করবে মেথি।
মেথি চুলের রঙ উৎপন্নের জন্য দায়ী কোষগুলোর কার্যক্রমকে সচল করে।
খুশকি দূর করে ত্বক পরিষ্কার রাখতে
খুশকি হচ্ছে ত্বকের মৃতকোষ। যা মাথার ত্বকে জমা হয়ে লোমকূপ বন্ধ করে দিয়ে চুলকে খাদ্য গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করে, তৈলাক্ত ত্বক সৃষ্টি করে। যার কারণে মাথার ত্বকে চর্মরোগ হয়।
বয়ঃসন্ধিকালের পর থেকে মানুষের মাথায় খুশকির প্রবণতা দেখা যায়। খুশকি দূর করতে কার্যকর হাতিয়ার হচ্ছে মেথি। নিয়মিত কয়েকদিন ব্যবহার করলেই খুশকি চলে যাবে। কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা শেষের দিকে বলা হয়েছে।
মসৃণ ও ঝলমলে চুল
মেথি কন্ডিশনারের মতো কাজ করে। চুলে প্রতিবার শ্যাম্পু ব্যবহার করার পর মেথি লাগালে চুল হয় ঝলমলে উজ্জ্বল এবং মসৃণ।
মাথার ত্বক ভালো রাখে
মেথিতে ব্যাকটেরিয়া ও প্রদাহ প্রতিরোধী উপাদান থাকায় তা মাথার ত্বককে কোনো সমস্যা হওয়া থেকে মুক্ত রাখে। ত্বকে জ্বালাপোড়া, চুলকানি, ফুসকুড়ি, ঘা – চর্ম সংক্রান্ত সমস্যাগুলো দূর করে মাথার ত্বককে ভালো রাখে। মূলত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে মেথি।
সংক্ষেপে বললে, চুলের যাবতীয় উপকার সাধন করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল গুণই মেথির মধ্যে উপস্থিত।

মেথির উপকারিতা চুলের জন্য কীভাবে মেথি ব্যবহার করতে হবে?
মেথি বীজ মুখে খাওয়া যায়, তরকারির সাথে খাওয়া যায়। আবার মেথি ভিজিয়ে রাখা পানিও খাওয়া যায়। গুঁড়া করে, পেস্ট করে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ আপনি যেকোনো ভাবেই এটি ব্যবহার করা যাবে।
শুধুমাত্র মেথি ব্যবহার করলেই এর কার্যকারিতাগুলো পাওয়া যায়। পাশাপাশি অন্যান্য উপকরণ যেমন- টক দই, নারিকেল তেল, সরিষার গুঁড়া, অলিভ অয়েল, আমলকীর সাথে ব্যবহার করলে কার্য গুণাগুণ আরও বেড়ে যায়।
১. খুশকি দূর করতে টক দই ও মেথির পেস্ট ফলদায়ক। পেস্ট তৈরি করতে আগের দিন রাতে পানিতে মেথি ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই ভেজা মেথি কিছুটা পানিসহ বেঁটে বা ব্লেন্ড করে নিন। মেথির পেস্ট হয়ে গেলে তাতে পরিমাণমতো টক দই দিয়ে মিশ্রণ করে নিন এবং পরে তা মাথার ত্বকে লাগিয়ে রাখুন ২০-৩০ মিনিট। তারপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত কয়েকদিন করলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।
২. চুল পড়া বন্ধ করতে মেথি ভেজানো পানি খাওয়া যায়, আবার মেথির পেস্ট নিয়মিত ব্যবহার করা যায়। প্রতিদিন মেথির পেস্ট ২০-৩০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রেখে তারপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন। এক মাসেই ফলাফল দেখতে পারবেন।
৩. মেথির পেস্টের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকসহ চুলের আগা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখবেন ৪০-৫০ মিনিট। তারপর পরিষ্কার করে নিবেন। নিয়মিত ব্যবহার করলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই চুল পড়ার হার কমে আসবে।
৪. অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলের সাথে মেথির তেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুল যথেষ্ট পুষ্টি পাবে। চুলের বৃদ্ধি ভালো হবে। চুল হবে ঘন ও মজবুত। আমলকীর গুঁড়া মেথির পেস্টের সাথে ব্যবহার করলেও এই উপকার হবে।
এভাবে নিয়মিত যদি মেথি ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার চুলের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিকার করতে পারবেন।
চুলের সমস্যা সমাধান করতে বাজারে যত মেডিসিন পাওয়া যায়, তা থেকে উপকার পাওয়ার সম্ভাবণা খুব একটা থাকে না। মেথি তো সবার রান্নাঘরেই থাকে। অন্যত্র টাকা খরচ করার আগে ঘরের এই উপকরণটি ব্যবহার করেই দেখুন কেমন ফলাফল পান।
আরো পড়ুন >> থাইরয়েড এর লক্ষণ