পবিত্র কুরআনের প্রতিটি সূরার আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য ও ফজিলত আছে। সেগুলোর মধ্যে এমনকিছু সূরা আছে যেগুলোর ফাজিল অন্য সূরা গুলোর উর্ধ্বে। সূরা মূলক সেউ সূরা গুলোর একটি। মহান আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাদের ক্ষমার জন্য অসংখ্য পথ খোলা রেখেছেন। সূরা মূলক তিলাওয়াত ও অন্তরে এই সূরা গেঁথে নিয়ে আমল করা ক্ষমা পাবার অন্যতম উত্তম পথ। সূরা মূলকের ফজিলত তা-ই বলে আমাদেরকে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, সূরা মূলকের ফজিলত, কীভাবে এই সূরা আমল করতে হবে এবং সূরা আল মূলকের বাংলা উচ্চারণ।
সূরা মূলক
৩০ পারার পবিত্র কুরআনে ১১৪ টি সূরা আছে। সূরা মূলক কুরআনের ৬৭ নাম্বার সূরা। সূরাটি ২ রুকু বিশিষ্ট এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩০ টি। সূরাটি পবিত্র মক্কা নগরীতে অবতীর্ণ হয়।
“মূলক” শব্দের অর্থ সার্বভৌম কর্তৃত্ব। আল্লাহ্ তা’আলার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব এই সূরায় বর্ণিত হয়েছে। এই সূরা পাঠ করা মানে মহান আল্লাহ’র সকল ক্ষমতাকে স্বীকার করা। যা শুনে মহান রাব্বুল আলামীন পাঠকারী বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং মাফও করে দিয়ে থাকেন।
কুরআন ও হাদিসে বান্দাকে ক্ষমা করার অনেক আমল উল্লেখ আছে। সূরা মূলক আমল করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ আমল। এর ফজিলত সমূহ জানলে আমরা তা বুঝতে পারি। ফজিলতপূর্ণ এই সূরা আমল করলে আল্লাহ্ তাঁর বান্দাকে সহজেই ক্ষমা করে দেন।
সূরাটি মহান প্রভূর প্রশংসা করার মাধ্যমে শুরু হয়। তারপর ক্রমে ক্রমে আল্লাহ’র বিভিন্ন গুণাবলী, নিয়ামত, ক্ষমতা ও বান্দার পাপের শাস্তির বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে। ইসলামের বাণী যারা অমান্য করবে তাদের কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে সূরা আল মূলকে।
এখন জেনে নিন, সূরাটির ফজিলত বিষয়ে।

সূরা মূলকের ফজিলত
আল্লাহ্ তার বান্দাদের সবসময় ক্ষমা করে দিতে পছন্দ করেন। আল্লাহ্ চান তাঁর বান্দারা গোনাহ থেকে মুক্ত থাকুক। তাই তো পরম করুণাময় আল্লাহ্ বান্দাকে মাফ করতে একাধিক সুযোগ রেখেছেন।
সূরা মূলক আমল করা সেই সুযোগ গুলোর একটি।
বিভিন্ন হাদিস থেকে একটি ঘটনা জানা যায় যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) একদা একজন ব্যক্তিকে বলেছিলেন, ” তুমি নিজে সূরা মূলক পড়ো, এবং তোমার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকেও এই সূরা শিক্ষা দাও। কেননা, এই সূরাটি বান্দাকে গোনাহ থেকে মুক্তিদান করে এবং হাশরের দিনে পাঠকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ’র সাথে ঝগড়া করে। কবরের আজাব থেকে বাঁচাতে ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা করতে এই সূরা সেদিন এর পাঠকারীর জন্য আল্লাহ’র কাছে সুপারিশ করবে। “
হযরত ইবনে আব্বাস আরও বলেছিলেন, ” হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) – বলেছেন, আমি আশা করি আমার সকল উম্মত সূরা মূলক অন্তরে গেঁথে রাখুক।”
সুতরাং বোঝা যায় যে, এই সূরাটি এর পাঠকারী ব্যক্তির জন্য হাশরের ময়দানে আল্লাহ’র কাছে সুপারিশ করবে যাতে আল্লাহ্ সেই বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিয়মিত সূরা মূলক তিলাওয়াত করতেন। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ” কেউ যদি নিয়মিত সূরা মূলক তিলাওয়াত করে, তাহলে সে কবরের আজাব থেকে মুক্ত থাকবে।”
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রতিরাতে সূরা মূলক তিলাওয়াত করে ঘুমাতে যেতেন। তাই তো বিশিষ্ট আলেমসমাজ বলেন ইশার নামাজে সূরা মূলক তিলাওয়াত করতে।
সুনানে আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমদ ও তিরমিজি শরীফের হাদিসে পাওয়া যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) বলেছেন -” পবিত্র কুরআনে ৩০ আয়াত সংখ্যার একটি সূরা আছে, সেই সূরাটি হাশরের দিনে কারও নামে আল্লাহ’র কাছে সুপারিশ করলে, আল্লাহ্ সেই বান্দাকে মাফ করে দিবেন। সূরাটি হলো – তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মূলক। ” অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) সূরা মূলকের কথা বলেছেন।
অতএব, উক্ত হাদিস ও বর্ণনা থেকে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন সূরা মূলক কতটা ফজিলতপূর্ণ। তাই চেষ্টা করুন এর আমল করার।

কখন সূরা মূলকের আমল করতে হবে?
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিরাতে সূরা মূলক তিলাওয়াত করতেন বলে একাধিক হাদিসে জানা যায়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ঘুমানোর পূর্বে সূরা আস-সাজদা ও সূরা মূলক পাঠ করতেন নিয়মিত।
সুতরাং, রাতের বেলা এই সূরা আমল করা অধিক ফজিলতপূর্ণ।
দেখে দেখে হোক অথবা মুখস্থ হোক, যেকোনো ভাবেই এই সূরা তিলাওয়াত করে আমল করা যাবে।
নিজে সূরা মূলকের ফজিলত জেনে নিয়মিত আমল করার চেষ্টা করুন। আপনার পরিচিতদেরও এ বিষয়ে জানান ও সওয়াব লাভ করুন। গোনাহ মুক্ত থাকুন। আল্লাহ’র ভয় অন্তরে সবসময় লালন করুন। ইসলাম নির্দেশিত বিধান মেনে জীবন পরিচালনা করতে চেষ্টা করুন। দুনিয়া ও পরকালের জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য নিজেকে আল্লাহ’র ইবাদাতে সঁপে দিন।
আরো পড়ুন >> জুম্মার খুতবা এর ইতিহাস ও খুতবার গুরুত্ব এবং বিধিবিধান